ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৯৮ শতাংশ গণপরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলে দাবি করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বিভিন্ন গণপরিবহনে ঈদ বকশিশের নামে ১২ দিনে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা আদায় হতে পারে বলেও সংগঠনটি তাদের পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেছে।
গতকাল (২৬ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি দেখতে গণপরিবহনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উপকমিটির সদস্যরা ২০ মার্চ ঢাকা মহানগরীতে কাজ করেছেন। তারা সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে ঈদযাত্রা পরিস্থিতি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রীসেবার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন।
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবার নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হবে ৮০ কোটি টাকা; রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৬০ কোটি; বিভিন্ন ধরনের রিকশায় ১৬০ কোটি এবং প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাসে ২১ কোটি টাকা। এছাড়া সদরঘাটে বিভিন্ন পারাপারে ১০০ কোটি, হিউম্যান হলারে ১৬ কোটি, বাস-মিনিবাসে ৯০ কোটি, ঢাকায় চলাচলকারী বাসে ১২ কোটি, ট্রেনের ছাদে ৮০ লাখ, রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে ২৫০ কোটি, রেলে টিকিটবিহীন যাত্রী থেকে সাড়ে ৭ কোটি এবং বিমানে ৩৫ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় অর্থাৎ ২০ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ঈদ বাজারসহ নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণীর গণপরিবহনে মানুষের ২২ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার ট্রিপ যাতায়াত হতে পারে। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাবে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। তাছাড়া ঈদ বাজারসহ নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন গণপরিবহনে বাড়তি ট্রিপ সম্পন্ন হবে। এসব যাত্রীর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানামুখী তৎপরতার মধ্যেও এবার ঈদযাত্রায় কেবল ঢাকা ছাড়তেই ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘বাস-লঞ্চ ও বিভিন্ন গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে চালক, সহকারীর বেতন-ভাতা ও দুই ঈদের বোনাস প্রতিদিনের আদায়কৃত ভাড়ায় ধার্য থাকলেও দেশের কোনো পরিবহনে তা কার্যকর নেই। ফলে এবারের ঈদে ৯৮ শতাংশ গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন মালিকদের বাড়তি মুনাফা লুফে নেয়াসহ নানা কারণে বিভিন্ন শ্রেণীর গণপরিবহন ও ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট পরিবহনগুলো একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। সড়ক ও নৌপথের পরিবহন মালিকদের নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় মনিটরিং ভিজিল্যান্স টিম থাকলেও এসব টিমে যাত্রী প্রতিনিধি না রাখায় যাত্রীর স্বার্থ কেউ দেখছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কিছু সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনে ডিজিটাল ভাড়া আদায় চালু করা, নগদ টাকার লেনদেন বন্ধ করা, সড়ক-মহাসড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা পদ্ধতিতে প্রসিকিউশন চালু করা এবং আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা।