বিশ্ববাজারে ক্রমেই স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকায় এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় নতুন গহনার চাহিদা দিন দিন কমছে। আর বাসাবাড়িতে থাকা পুরনো স্বর্ণালংকার ও কয়েন বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এতে তারা লাভবান হলেও গহনা ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে নিম্নমুখী হচ্ছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এ ধারা অব্যাহত থাকলে প্রধান বাজারগুলোয় স্বর্ণ আমদানির পরিমাণ কমতে পারে। এ প্রবণতা আগামী দিনগুলোয় স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা সীমিত করতে পারে।
স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত সপ্তাহেও এ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ভূরাজনৈতিক ও আর্থিক অনিশ্চয়তার মিশ্র প্রভাব স্বর্ণের এ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে। গত বছর মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়েছিল ৩০ শতাংশ।
বিশ্বে স্বর্ণের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশ ভারত। দেশটির সরকার জুলাইয়ে মূল্যবান ধাতুটির আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। এর পর থেকে দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি। বর্তমানে প্রতি ১০ গ্রাম স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৮৯ হাজার ৭৯৬ রুপিতে পৌঁছেছে। দামের ঊর্ধ্বগতি ভারতের বৃহত্তম বুলিয়ন মার্কেট জাভেরি বাজারে স্ক্র্যাপ গোল্ড (পুরনো স্বর্ণ) ক্রেতাদের জন্য বাড়তি ব্যবসার সুযোগ তৈরি করেছে।
ভারতে বর্তমানে বিয়ের মৌসুম চলছে। কিন্তু গহনা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাধারণ সময়ের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। যারা কিনছেন তাদের অনেকেই খরচ কমাতে পুরনো স্বর্ণালংকার বদলে নতুন গহনা নিচ্ছেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের স্ক্র্যাপ গোল্ডের সরবরাহ ছিল ১১৪ দশমিক ৩ টন। ২০২৫ সালে তা আরো বাড়তে পারে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের স্বর্ণের বাজারেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। দুবাইয়ের এক বুলিয়ন ডিলার জানান, আমদানি শুল্ক এড়াতে অনেক ভারতীয় পর্যটক দুবাইয়ে স্বর্ণ ক্রয় করেন। কিন্তু তাদের কাছেও বর্তমানে চাহিদা কমেছে।
চীনে খুচরায় স্বর্ণ বিক্রির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত আছে। গহনা খাতে কারুশিল্পের কারণে মূল্য সংযোজন বেশি থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণমুদ্রা ও বার কেনার দিকে ঝুঁকছেন।
এশিয়ার অন্যান্য বড় বাজারেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেখানে বিক্রেতার সংখ্যা ক্রেতার চেয়ে বেশি। সিঙ্গাপুরের অনেক গ্রাহক বাড়িতে থাকা পুরনো বা ভাঙা গহনা খুঁজে বের করে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন।
তবে বিশ্লেষকরা জানান, আগামী দিনগুলোয় গহনা খাতে চাহিদা নিম্নমুখী থাকলেও বিনিয়োগ খাতে স্বর্ণের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।