দেশে ব্যবসায় পরিবেশ তথা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো পাঁচটি বড় বাধা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ সমস্যা, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাত ও কর হার। এছাড়া দেশের কৌশলগত চারটি খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যকর করে নীতিগত পদক্ষেপ নিলে প্রতি বছর এসব খাতে প্রায় ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। খাত চারটি হচ্ছে আবাসন, শিল্পে রঙ, তৈরি পোশাক শিল্প ও ডিজিটাল আর্থিক সেবা।
বাংলাদেশের বেসরকারি খাত নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের আবাসন খাতে ডিজিটাল ম্যাপিং, জমি নিবন্ধন ও জমির অতিরিক্ত দাম নিয়ে জটিলতা রয়েছে। আবার শিল্পের রঙয়ের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে, শুল্কের হারও অনেক বেশি। এছাড়া ডিজিটাল আর্থিক সেবায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মার্চেন্টদের লেনদেন সীমা বাড়ানোর মতো কিছু জটিলতা আছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে।
আইএফসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশী রফতানি পণ্যে শুল্কহার বেড়ে যাবে। কারণ তখন পণ্য রফতানিতে বর্তমান বাজার সুবিধা থাকবে না। বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে সবচেয়ে বেশি শুল্ক বাড়বে। ফলে প্রধান বাজারগুলোয় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি পরিবেশ ও শ্রম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পরিপালনে বিনিয়োগ করতে হবে।
প্রতিবেদন প্রকাশের পরে অনুষ্ঠানস্থলে দুটি পৃথক প্যানেল আলোচনা হয়। প্রথম প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সুপারিশগুলো কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন প্রশ্ন করা হয় লুৎফে সিদ্দিকীর কাছে। জবাবে তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই এসব সমস্যা রয়েছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে বর্তমান এসব সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে আমার ধারণা ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। আগে এটিকে ভালো অভিপ্রায়ের সরকার মনে করতাম, এখন সরকারকে বাস্তবায়নমুখী সরকার বলে মনে করছি।’
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ হচ্ছে যত বেশি সম্ভব কর্মসংস্থান বাড়ানো। বিশ্বব্যাংকের এসব সুপারিশ সরকারের কাজে সহায়ক হবে।’
দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর, অনন্ত গ্রুপের এমডি শরিফ জহির, এবিসি রিয়েল এস্টেটের এমডি শ্রাবন্তী দত্ত ও নিপ্পন পেইন্টের হেড অব অপারেশনস অরুণ মিত্রা।
বিটি/ আরকে