1. soburahmed@gmail.com : Falcon News 24 : Falcon News 24
  2. ashraf@websofttechnologyltd.com : Falcon News 24 : Falcon News 24
  3. sharifonline@gmail.com : Falcon News 24 : Falcon News 24

​প্লাস্টিক দূষণ রোধে বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১২ বার দেখা হয়েছে

অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও ‘প্লাস্টিক বর্জ্য’ সংকটের মুখোমুখি। আজ ৩০ মার্চ আন্তর্জাতিক ‘জিরো ওয়েস্ট দিবস’ উপলক্ষে এটি বোঝা জরুরি যে প্লাস্টিক দূষণ কেবল পরিবেশগত সমস্যা নয়; এটি একটি অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ যা দ্রুত ও সমন্বিত সমাধানের দাবি রাখে।

কানাডার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়া যায়, তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন এবং একটি বিশেষায়িত পন্থা গ্রহণ করা জরুরি। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, জনসচেতনতা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা বিবেচনায় রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশ্ন হলো: আমরা কি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সুবিধাবাদী মনোভাব বদলাতে প্রস্তুত?

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ব্যবহারের হার গত ৩০ বছরে চার গুণ বেড়েছে, অথচ পুনর্ব্যবহারের হার খুবই নিম্নমানের। মাত্র ৯ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহৃত হয়, আর বাংলাদেশের মতো দেশে এই হার আরও কম।

এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স ২০২২ এর তথ্যানুসারে পরিবেশ দূষণ রোধে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বৈশ্বিক মোট প্লাস্টিক দূষণের ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাংলাদেশে হয়। দেশে ২০০৫ সালে জনপ্রতি প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৩ কেজি। ২০২০ সালে তা ৯ কেজিতে পৌঁছেছে। রাজধানীতে এ হার আরও বেশি। ঢাকায় বছরে জনপ্রতি ২৪ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে।

পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও, কার্যকর প্রয়োগের অভাবে প্লাস্টিক থেকে পরিবেশ দূষণ শুধু অব্যাহতই নয় বরং উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতি বছর মাথাপিছু প্রায় ৫ কেজি প্লাস্টিক দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্লাস্টিক দ্রব্যাদির বাজার প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের। আর প্লাস্টিক উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। ২০ লাখেরও বেশি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত। ঢাকা শহরে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ পলিব্যাগ পরিত্যক্ত হয়ে তা পুকুর, ডোবা, নদী-নালা ও সাগরে গিয়ে জমা হচ্ছে। কৃষকের চাষের জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট ভরে আছে প্লাস্টিক বর্জ্যে।

বিবিসি এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রতি মিনিটে প্রায় ৫ লাখ প্লাস্টিক বোতল বিক্রি হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে এখন বছরে ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে গিয়ে পড়ে, ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে এর পরিমাণ হবে ১ লাখ ৩০ হাজার টন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এক গবেষণায় বলছে, দোকানে মুদি পণ্য বহনের জন্য যেসব ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে। চা, কফি, জুস কিংবা কোমল পানীয়ের জন্য যেসব প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আর ডায়াপার ও প্লাস্টিক বোতল টিকে থাকে ৪৫০ বছর পর্যন্ত।

পুনর্ব্যবহারের ৯ শতাংশের বাইরের বাকি অংশ ল্যান্ডফিল, নদী-নালা, শহরের রাস্তাঘাটে জমে থাকে এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক আকারে খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে। উন্নত দেশগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক উন্নত হলেও বাংলাদেশে অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার এবং অকার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থার দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা, প্রণোদনা এবং আচরণগত পরিবর্তন একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

কানাডার কিছু শহর যেমন মন্ট্রিল এবং ব্যানফ সফলভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে,আবার ভ্যাঙ্কুভার এবং ক্যালগারি কিছু বিধিনিষেধ জনসাধারণের বিরোধিতার কারণে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জরুরি হলেও, জনগণের মানসিক প্রস্তুতি, অর্থনৈতিক প্রণোদনা এবং বিকল্প অবকাঠামো ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বড় শহরগুলোর সুপারশপগুলোতে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু কার্যকর বাস্তবায়ন এখনো দুর্বল।

জিরো ওয়েস্ট লক্ষ্য অর্জনে কেবল প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করাই যথেষ্ট নয়; বরং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে টেকসই পণ্য ব্যবহার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

একটি বিতর্কিত উদাহরণ হলো যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় পরিবেশবান্ধব প্রচেষ্টার প্রতি বিদ্রুপ ভাব। প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞাকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। বাংলাদেশকে অবশ্যই এমন প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব এড়াতে হবে। সরাসরি নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা ও ভোক্তাদের টেকসই পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

কানাডিয়ান শহর ব্যানফের ‘আস্ক-ফার্স্ট’ নীতি, যেখানে গ্রাহকরা অনুরোধ না করলে প্লাস্টিক সামগ্রী সরবরাহ করা হয় না, এটি একটি ছোট কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ। বাংলাদেশে এই মডেল বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, যেখানে খাবারের দোকান ও সুপারমার্কেটে অবাধে প্লাস্টিক বিতরণ করা হয়। যদি গ্রাহককে প্লাস্টিক ব্যাগ পেতে আলাদা করে অনুরোধ করতে হয়, তবে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

পুনঃব্যবহারযোগ্য পাত্র ও বোতল ফেরত কর্মসূচি চালু করাও একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে। যেমন ঢাকা, চট্রগ্রাম ও কক্সবাজারের মতো শহরে পর্যটকদের জন্য পুনঃব্যবহারযোগ্য কাপ ধার দেওয়া এবং তা নির্দিষ্ট স্থানে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে।

প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর অর্থনৈতিক যুক্তি পরিবেশগত কারণের মতোই শক্তিশালী। প্লাস্টিক দূষণ পরিষ্কার করা, জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খরচ বিশাল। ঢাকার মতো শহরে, যেখানে প্লাস্টিক জমে জলাবদ্ধতা বাড়ায়, কার্যকর প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো ক্ষতির খরচ কমাতে সহায়ক হবে।

একটি কার্যকর অর্থনৈতিক মডেল হতে পারে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উপর কর আরোপ এবং টেকসই পণ্যে ভর্তুকি প্রদান। কানাডার প্রেভোস্ট শহরের মতো ‘ইকো-ট্যাক্স’ চালু করা যেতে পারে, যা অর্থনৈতিকভাবে জনসাধারণকে পুনঃব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করে।

বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অভাব হচ্ছে কমিউনিটি সম্পৃক্ততা। অনানুষ্ঠানিক বর্জ্য সংগ্রাহকরা প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা সহায়তা পায় না। তাদের পৌরসভা কর্মসূচিতে যুক্ত করা, সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করবে।

প্রযুক্তি এবং উদ্যোক্তা ক্ষেত্রেও উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপগুলো কৃষি বর্জ্য থেকে বিকল্প পণ্য তৈরি করছে। বাংলাদেশকেও এই ধরনের উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা উচিত। যদি ইন্দোনেশিয়া আখের বর্জ্য থেকে বায়োডিগ্রেডেবল স্ট্র তৈরি করতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেন গম বা ধানের তুষ থেকে টেকসই প্যাকেজিং তৈরি করতে পারবে না?

এই সংকট মোকাবিলায় বিলম্ব বা দেরি করাটা বিপজ্জনক হতে পারে। প্লাস্টিক দূষণ জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, কৃষি উৎপাদনশীলতা কমায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। প্রশ্ন হলো: আমরা কি পদক্ষেপ নিতে পারি না, নাকি আমরা নিতে চাই না?

জিরো ওয়েস্ট লক্ষ্য অর্জনের পথ সহজ নয়, তবে বাংলাদেশকে কানাডার নীতি অন্ধভাবে অনুকরণ না করে স্থানীয় বাস্তবতার সাথে মানানসই কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ধাপে ধাপে নীতি বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

আন্তর্জাতিক জিরো ওয়েস্ট দিবস উপলক্ষে আমাদের প্লাস্টিক সমস্যার সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে—যা উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে, দায়িত্বশীল আচরণে প্রণোদনা দেবে এবং একটি টেকসই সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।

রেজাউল করিম
সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী

নিউজটি শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও নিউজ

পুরাতন নিউজ খুঁজুন

 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
© কপিরাইট ২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: সবুর আহমেদ